একটি অমর সমাধি

একটি অমর সমাধি
সৈয়দ ফখরুদ্দিন মাহমুদ
“দাঁড়াও পথিক বর”। যথার্থ বাংগালী, যদি তুমি হও
ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধি স্থলে।
এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাংগালীর সর্বশ্রেষ্ট নেতা
এদেশের মুক্তি দাতা, বাংলার নয়নের মণি।
শত দুঃখ জ্বলা স’য়ে, জীবনের বিনিময়ে যিনি
বাংগালীর দিয়ে গেছে স্থান, বিশ্বের দুয়ারে।
বিনিময়ে দিয়েছে আত্নাহুতি, তার পূন্যময়ী সতী
নিস্পাপ কনিষ্ট সন্তান, পিতার আদুরে “রাসেল”,
স্নেহের পরশ পেতে, সর্বদা ছিল যে তার
পিতার কাছে কাছে ঘেঁষে।
নবপরিণীতা পুত্র বধু দু’টি, হায়; কেহই তো পায়নি রেহাই
উম্মাদের নির্মম বুলেট হতে।
হতভাগ্য বাংগালী আজ তাই, অভিশপ্ত জাতি।
সুতরাং মুখ ঢাকো, মুখ ঢাকো তুমি।
এ আমার প্রলাপ নহে, এ আমার পাপের জ্বালা।
এ আমার অন্তরের ব্যাথা।
তাই, হে পথিক বর! আরো একটু দাঁড়িয়ে যাও।
হেথা পূণ্য ভূমে,”বাংগালী তীর্থ ভূমি”, টুংগীপাড়া গ্রামে।
জীবনে কখনও যে একদন্ড তরে লভেনি বিশ্রাম
আজ সে, গহন মাটির গোরে, তাঁরই শান্তির নীড়ে
যেন করিছে আরাম।
পার্শ্বে শায়িতা আছে স্নেহময়ী মাতা, আরো আছে পূণ্যবান পিতা।
কৃতজ্ঞ জাতি। কী আর কহিব তোরে
জীবনে তো নিয়েছিস শুধু, প্রতিদানে কিছুই কি
দেবার নেই তোর। যদি থাকে
হে পথিক! তবপরে মোর মাত্র একটি অনুরোধ–
তোমার হাতের ঐ–“ফুল মালা” হ’তে
অন্তত একটি “পাপড়ি”, আর একবিন্দু “অশ্রুজল”
ফেলে যেও ধীরে– অবশ্য ক’রে এই সমাধি স্থলে
আর এমনি করেই “তার কাছে সমগ্র জাতির ঋণ”
শুধরাতে হবে পলে পলে।
আমার বিশ্বাস। এরই মধ্য দিয়ে বাংগালীর ঘুচিবে অভিশাপ,
আসিবে সুদিন।
১৪ই জুন, ১৯৮৪

Leave a Comment

Welcome...
Have you faced any kind of problem, just comment.

কোন সমস্যা মনে হলে ইমেইল এড্রেস সহ কমেন্ট করুন, আপনার ইমেইল এড্রেস এবং সমস্যার গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।