বিচার, সেটা হোক সমাজে হোক পরিবারে

চুপ করে থাকতাম কোন প্রতিবাদ নয়। কারণ ইতিপূর্বে সব সময় কেবল আমার বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। আর এ বিচারেও যে রায় আমার বিরুদ্ধে হবে তা জেনেই হয়ত আমি চুপ থাকতাম। সব বিচার যে আমার বিরুদ্ধে হত তা কিন্তু নয় দেখা যেত আমার পক্ষে রায় আসছে কিন্তু আমার বোঝা দায় ছিল, কারণ ছোট ছিলাম। বাব-মা আমাদের ভাই-বোনের বিভিন্ন অঘটনের বিচার করতেন। প্রায় সময় দেখা যেত বাবা-মা এর ঝগড়ায় ভাই-বোনেরা পক্ষে বিপক্ষে থাকলেও আমি নিরপেক্ষ থাকার কারনে এবং ঝগড়ার বিপক্ষে থাকার কারণে আমি একা পড়ে যেতাম। এবং তারা সবাই মিমাংসায় আসলেও আমি যে কোন পক্ষে যাইনি তাই নিয়ে প্রায় সময় আমাকে নিম্ন মানসিকতার মানুষ ভাবতেন তারা এবং বিচারকরা!।

এটি বেশিদিন আগের ঘটনা নয় যে আমি চুপ থাকি, মানে গতকালও আমার বিরুদ্ধে রায় হলে প্রতিবাদ করতাম কার কি দোষ বোঝাতাম, না বুঝলেও আমি বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতাম, এবং বিচারের পর আমি আইন!! নিজের হাতে তুলি নিতাম আর পুনরায় দন্ডিত হতাম। শারিরিক ভাবে দুর্বল আর মেজাজ গরম থাকার কারনেই হয়ত আমার অনেক ভুল হয়ে যেত যার কারনে ভাই-বোনদের কাছে আমি হেরেও যেতাম এবং কোন বিচারের রায় আমার পক্ষে যেত না। যেমন ভাই বোনের মারামারিতে আমি অপদস্ত হতাম বেশি আর বিচারের রায় হত এমন যে, আমিই মারামারি শুরু করেছিলাম। এমন যখন সবসময় হত এবং নোটিস করলাম যে বিচার আমার পক্ষে থাকবে না তাই প্রতিবাদ বন্ধ করলাম। মানে সেদিন আমিই যেহেতু অপরাধী তাই আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম শাস্তির জন্য এবং কোন রকম প্রতিবাদ করা ছাড়াই দন্ডিত হতাম।
রায় আমার পক্ষে না থাকার করনে রাতে চুপিসারে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যেতাম তা আগের থেকে বেড়ে গেল। আমার পাশে ভাই-বোনেরা ঘুমালেও তারা কোন দিনও জানতো না, তারা যখন গভীর ঘুমে থাকতো তখন আমি মুখবুজে বালিশ ভেজাতাম। সে দিনের পর থেকে বালিশের একপাশ ভেজার কারণে অপর পাশে ঘুমাতে যেতেও বালিশ ভিজে যেত।
কবে থেকে এমন কাঁদতাম তা মনে করতে পারি না, তবে এমন কাঁদার কারণে রাতে ঘুম দেরি করে আসতো আর ভেজা বালিশে ঘুমাতে না পেরে বালিশ ছাড়াই ঘুমাতাম কখন জানতাম না। এত দেরি করে ঘুমানোর কারনে ভাই বোনেরা আমার আগেই ঘুম থেকে উঠতো এবং আমাকে ওঠানোর জন্যই তারা ব্যস্ত হয়ে থাকতো। দোষ আমি বেশি ঘুমাই। কান্নার কথা আমি কোন দিনও তাদের বলি নাই, তারা আমার কষ্টের উপহাস করবে ভেবে। তারা জানতোই না রাতে আমার কি হয়, আমি কি করি। সকালে আমাকে উঠতেই হত তাদের সাথে। তা না হলে সিলিং ফ্যান ছেড়ে ঠান্ডা করে রাখা হত আমাকে, কাথা জড়িয়ে তা নিবাড়ন করার চেষ্টা করলেও তারা তা কেড়ে নিত। না আমরা দরিদ্র ছিলাম না, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। শেষের দিকে তোষকের নিচে চলে যেতাম, তাতেও রক্ষা হত না, তারা হয়তো মজা পেত আমার এমন ঘুম নিয়ে। কিন্তু আমার তো ঘুমাতে হবে। আমি কিছুতেই না পেরে বিছানা ছাড়তাম, ঘড় ছাড়তাম, এবং ঘুমিয়ে পড়তাম বাসার ছাদে যেখানে তাদের আনাগোনা থাকতো না, এবং কাক সহ অন্যান্য পাখিদের সুমধুর কন্ঠ সঙ্গে রোদ আর বাতাস থাকতো। ঘরের ঘুমটা আমি বাহিরে কাটানো কোথা থেকে শিখেছি জানিনা, যতদূর মনে পড়ে ঘুম থেকে ধমকের সূরে এবং ফ্যান ছেড়ে অত্যাচার করাটা খুব খারাপ এবং না ঘুমাতে দেয়াটাই সবচেয়ে কঠিন শাস্তি যেটা আমি পেয়েছি। তখন থেকেই আমি কাউকে ঘুম থেকে জাগাতে পারি না, এমনকি ভাই-বোনেরা আমার ঘুম নিয়ে মজা করলেও আমি তাদের কোন সময় ঘুম থেকে জাগাতাম না। বাবা-মা আমার এই ঘুম থেকে না জাগানোটাকেও অপরাধ ভাবতেন, অবশ্য ব্যাপারটা আমি সমাধান করে ছিলাম, মানে গায়ে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ঘুম থেকে জাগানোর সিস্টেমটা এপ্লাই করতাম। কিন্তু আমার পরিবার আমাকে দীর্ঘ ১৮ বৎসর যাবৎ ধমকের সূরে ঘুম থেকে জাগিয়েছিল, যদিও পরে তাদের বোঝাতে পেরেছিলাম আমাকে কিভাবে ঘুম থেকে উঠাতে হবে। আর ভাই বোনদের বোঝাতে হয় নি। কারণ আমি সেদিনের পর থেকে তাদের সাথে এমনকি বাবা-মার সাথেও কথা বলা বাদ দিয়েছিলাম। যখন টাকা লাগতো তখন, মানে বাহিরের খাবার না খাওয়ার কারণে আমার হাত খরচ ছিলো না, স্কুলের বা কলেজের ফি লাগতো তার জন্যই টাকা চাইতাম কোন অতিরিক্ত টাকা চাইতাম না তাই কোন অতিরিক্ত কথাও বলতে হতো না। এই অল্প কথা বলার এবং কথা না বলাটা আমার জন্য কাল হয়ে গেল। আমি কারো সাথে কথা বলতে পারি না। সাবলিল ভাবে কথা বলতে বলতে তোতলামো চলে আসে, কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারি না।

Leave a Comment

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

Ads Blocker Detected!!!

We have detected that you are using extensions to block ads. Please support us by disabling these ads blocker.

Welcome...
Have you faced any kind of problem, just comment.

কোন সমস্যা মনে হলে ইমেইল এড্রেস সহ কমেন্ট করুন, আপনার ইমেইল এড্রেস এবং সমস্যার গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে।